বিশ্ব মানবতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন এর বানী, ১৯ আগস্ট ২০১৬

featured-image-sgmessageআজ রেকর্ড পরিমাণ ১৩ কোটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এই সাহায্য প্রার্থী মানুষদের এক সঙ্গে দলবদ্ধ করা হলে পৃথিবীর দশম জনবহুল দেশ গঠিত হবে ।

এই সংখ্যাগুলো সত্যিই বিস্ময়কর, কিন্তু তা এই ঘটনার একটি ভগ্নাংশ মাত্র ।  এই পরিসংখ্যানের পিছনে লুকায়িত আছে ব্যক্তি, পরিবার ও সম্প্রদায় যাদের জীবন এখন  বিধ্বস্ত।  আপনার ও আমার প্রতি অভিন্ন মানুষ, যেমন  শিশু, নারী এবং পুরুষ তারা  প্রতিদিন অসম্ভব সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হচ্ছে। এই মাতাপিতাগন তাদের সন্তানদের জন্য হয় খাদ্য অথবা ঔষধ কেনার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন।  এই ছেলেমেয়েরা হয় স্কুলে যাওয়া অথবা পরিবারকে সহায়তায় কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে।  এই পরিবারগুলো হয় বোমাবর্ষণের ঝুঁকিসহ বাড়িতে অবস্থান করছেন অথবা বাধ্য হচ্ছেন বিপদজ্জনক ভাবে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে।

এই সংকট যা এই মানুষগুলোকে আশাহীন কষ্টে ফেলে দিয়েছে তা সমাধানের উপায় সহজ বা তড়িৎ নয়।   কিন্তু  কিছু জিনিষ আছে, যা আমরা সবাই আজ এবং প্রতিদিন করতে পারি । আমরা সমবেদনা দেখাতে পারি, আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি, এবং আমরা পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে পারি।

বিশ্ব মানবতা দিবস মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করার একটি বার্ষিক দিন ।  এছাড়া সংকটের সময় শ্রম দেয়া মানবিক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এটি  একটি উপলক্ষ্য । আমার শ্রদ্ধা  এই নিবেদিত নারী  ও পুরুষদের প্রতি যারা বিপদ উপেক্ষা করে অধিক ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে।

আজ আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি জাতিসংঘের “World You’d Rather” প্রচারণায় সম্পৃক্ত হতে।  সচেতনতা ও সহানুভূতি গড়ে তোলার পাশাপাশি, এই প্রচারণার একটি শক্ত লক্ষ্য হচ্ছে  জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় জরুরি সাড়া তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ।  এবং মানবতার অগ্রদূত হিসেবে  নথিভুক্ত করা ব্যক্তিদের সর্বত্র সহায়তা করা।  আমাদের সবাইকে সমাজ ও সরকারগুলোর কাছে মানবতাকে প্রথম হিসেবে স্থাপন করার  দাবি তুলে ধরতে হবে।

এই বছরের শুরুর দিকে ৯০০০ অংশগ্রহণকারী প্রথম বিশ্ব মানবিক শীর্ষ সন্মেলনের জন্য ইস্তাম্বুলে সমেবত হন।   বিশ্ব নেতাগন  যুদ্ধ, দুর্যোগ এবং তীব্র অরক্ষিত অবস্থার মধ্যে বসবাসকারী মানুষের জীবন রুপান্তর করতে প্রতিশ্র্রুতিবদ্ধ। তারা মানবতার এজেন্ডার পিছনে আছেন এবং কাউকে ফেলে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে  অঙ্গীকারাবদ্ধ।

এই প্রতিশ্রুতি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে।    মানবাধিকার, স্থিতিস্থাপকতা এবং দারিদ্র বিমোচনকে কেন্দ্রবিন্দু করে এই  ১৭ টি বৈশ্বিক লক্ষ্য ১৫ বছরের একটি বিশ্ব উন্নীত পরিকল্পনা প্রস্তাব করে যা চাহিদা এবং দুর্বলতা কমাতে এবং সবার  জন্য শান্তি, মর্যাদা ও সুযোগ করে দিবে।  এই যৌথ যাত্রা সফল করার জন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা  প্রয়োজন।    আমাদের প্রত্যেকে একটি পরিবর্তন আনতে পারি।  এই বিশ্ব মানবতা দিবসে আমরা মানবতার নামে ঐক্যবদ্ধ হই এবং এটাই প্রমান করি যে, আমরা কাউকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবো না।